পোড়াহাটি নীলকুঠির ইতিহাস ।

View this thread on: d.buzz | hive.blog | peakd.com | ecency.com
·@powerupme·
0.000 HBD
পোড়াহাটি নীলকুঠির ইতিহাস ।
ঝিনাইদহ শহর হতে ৬ কি.মি. পূর্ব দিকে পাঁকা রাস্তা সংলগ্ন পোড়াহাটি নীলকুঠির ধ্বংশাবশেষে এখনো বিদ্যমান। পোড়াহাটি হতে এ ইউনিয়নের নামকরণ হয়েছে পোড়াহাটি ইউনিয়ন। কুঠিবাড়ির উত্তর পার্শ্বদিয়ে নবগঙ্গা নদী প্রবাহিত। ইহার পূর্বদিকে মধুপুর হাট। এ হাট নীলকর টি.সি টুইডি সাহেব প্রথম বসান। বর্তমানে এ স্থান মধুপুর নামে সমাধিক পরিচিত। কুঠিবাড়িটি পোড়াহাটি মৌজায় অবস্থিত, সে জন্য এটি পোড়াহাটি কুঠি নামে খ্যাত। আসল কুঠি ভবনটি আজ ধুলায় লুন্ঠিত।কিন্তু কুঠির কার্য্যাধক্ষের(Manager) সুউচ্চ দ্বিতল ভবন জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় এখনও বিদ্যমান। এ গৃহ সংলগ্ন উত্তর পার্শ্বে নদীর ঠিক কিনারায় দু'টি হৌজ বা চৌবাচ্চা আছে। এই চৌবাচ্চায় নীল গাছ জাগ দেওয়া হতো। হৌজ বা চৌবাচ্চার পরিমান দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে যথাক্রমে ২১'/২১'/২' । চুন ও সুরকীর সংমিশ্রনে ইট গেঁথে হৌজ নির্মিত।
নীল পচানোর জন্য পরিষ্কার পানির প্রয়োজন,, সে জন্য নীলকুঠিগুলো প্রায়ই নদীর তীরে নির্মিত হতো। ১৮০৫-১০ সালের মধ্যে পোড়াহাটি নীলকুঠি স্থাপিত হয়। হেনরী রাসেল(Henry Russel) সাহেব ছিলেন এ কুঠির প্রতিষ্ঠাতা। পোড়াহাটি নীলকুঠির ১৪ কিমি. পূর্বে মাগুরা জেলার অন্তর্গত হাজরাপুর নীল কনসরণের(Concerns) মালিক ছিলেন ড. থমাস টুইডি(D.Thomas Tweedie)।
থমাস টুইডির দুই পুত্র: জেমস্ জানিয়ড ও টি.সি. টুইডি
(T.C Tweedie). টি.সি টুইডি ছিলেন আ,সি,এস অফিসার ও ব্যারিষ্টার। পিতা ড. থমাস টুইডি মারা গেলে বড় ভাই জেমস্ জানিয়ড হাজরাপুর কনসরণ ও ছোট ভাই টি.সি টুইডি পোড়াহাটি কনসরণের মালিক হন। হাজরাপুর কনসনণের মধ্যে হাজরাপুর, লোহাজঙ্গ, নারায়ণপুর, বরীশাট, পবহাটি, রাজারামপুর, জিতোড়, ভবানীপুর, গোপালপুর,ফলুয়া,প্রভূতি ১৪টি কুঠি ছিল। অপরপক্ষে পোড়াহাটির কনসারণের মধ্যে পোড়াহাটি, কলমনখালী, হাজরাতলা, নগরবাথান,বারইখালী,ভাঁটই,মথুরাপুর,দূর্গাপুর প্রভৃতি স্থানে কুঠি ছিল। হেনরী রাসেল সাহেবের নিকট হতে পোড়াহাটি কনসারণ টি.সি টুইডি খরিদ করে নেন এবং দীর্ঘদিন ধরে তিনি এ কুঠির মালিক ছিলেন। সেজন্য পোড়াহাটি নীলকুঠির উত্থান-পতনের সাথে টি.সি টুইডির নাম জড়িত। তাঁর বড় ভাই হাজরাপুর কনসরণের মালিক জেমস জানিয়াডের একমাত্র পুত্রের নাম জর্জ ডগলেস্ । হাজরাপুরে তাদের আবাস বাটি ছিল।জেমস জানিয়াড সাহেব হাজরাপুরে মারা যায় এবং সেখানে তার কবর দেওয়া হয়। জেমস জানিয়াডের পুত্র জর্জ ডগলেস্-এর নামানুসারে একটি গ্রামের নামরকরন করা হয় ' ডগলেস্ নগর'। গ্রামটি বর্তমানে মাগুরা জেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে।
বড় ভাই জেমস্ জানিয়াড সাহেবের মৃত্যুর পর টি.সি টুইডি সাহেব হাজরাপুর কুঠির মালিক হন। তখন পোড়াহাটির নীল কানসরণ হাজরাপুরেরর সাথে একত্রিভুত করা হয়। পরে টুইডি সাহেব উক্ত কুঠি ও সম্পত্তি ব্যারিষ্টার বোমকেশ চক্রবর্তীর নিকট বিক্রয় করে দেন। ১৮৫০-৬০ সালের মধ্যে সম্মিলিত কারবারে ১৬০০০ বিঘা জমিতে বছরে ১০০০ মন নীল উৎপন্ন হতো। হাজরাপুর কুঠি ও সম্পত্তি পরবর্তিকালে মাগুরা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ মো: মোকলেচুর রহমান কিনে নেন ১৯৬০ সালে।
রাজারামপুরের ভূপতিচরণ দত্ত টি.সি টুইডির ম্যানেজার ছিলেন। তৎপর তার পুত্র ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত পোড়াহাটি নীলকুঠির ম্যানেজার নিযুক্ত হন। টি.সি টুইডির পুত্রের নাম ছিল জর্জ স্টিফিনস্। তাঁর নামানুসারে "স্টিফিন নগর" গ্রামের নামকরন করা হয়। ঝিনাইদহ শহরের ৪ কিমি. উত্তরে আবস্থিত স্টিফিন নগর তাঁর নামের পরিচয় বহন করছে। নীল কুঠিয়াল সাহেবদের আনিত ও সাহায্যেপুষ্ট বসতি স্থাপনকারী প্রায় ৫০ ঘর বুনো জাতি পোড়াহাটি কুঠিবাড়ির পশ্চিম পার্শ্বে এখনও বসবাস করছে।কয়েকটি প্রাচীন ঝাউ ও ছাতিয়াল বৃক্ষ এখনও এই স্থানের কাল সাক্ষ্যরুপে দন্ডায়মান।
এখানে উল্লেখ্য যে, কুঠির শেষ ম্যানেজার বাবু ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত মুল কুঠি ভবন ভেঙ্গে বিক্রয় করে দেন(১৯৬০-৬৫ সালের মধ্যে)। কুঠিবাড়ির দৃষ্টিনন্দন বিশালকায় ফটকও এ সময় ভেঙ্গে বিক্রয় করে দেওয়া হয়। ফলে কুঠিবাড়ির অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।
নবগঙ্গা নদীর দক্ষিন তীরে ম্যানেজার ভবনটি ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় এখনও দাড়িয়ে আছে। এটি একটি দ্বিতল ভবন।চুন-সুরকীর গাঁথুনি দিয়ে এ ভবনটি নির্মিত। ইহার দৈর্ঘ্য ৪৮' প্রস্থ ১৮' উচ্চতা ১৫' ও দেয়াল ২৫" ইঞ্চি পুরু। পূর্ব দিকে ১১ ধাপ বিশিষ্ট সুউচ্চ সিঁড়ি। ভবনের উপর তলায় ৩টি ও নীচ তলায় ৩টি মোট ৬ টি কক্ষ আছে। পলেস্টার খসে পড়ায় ভবনটি জীর্ণ দশায় পরিনত হয়েছে।
কুঠির সর্বশেষ ম্যানেজার বাবু ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের ৫ পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র বাবু মনোজ দত্ত বর্তমানে এ ভবনের বিশাল সম্পত্তির নিয়ন্ত্রাণাধীন আছেন।

তথ্যসুত্র,,সংগ্রহ
👍 , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , ,