কদম ফুল

View this thread on: d.buzz | hive.blog | peakd.com | ecency.com
·@shahinaubl·
0.000 HBD
কদম ফুল
বাঙালিরা প্রতিটা মৌসুম কে নিজেদের মত করে আমন্ত্রণ জানায়। আর প্রকৃতিও প্রতিটি মৌসুমে নিজেদেরকে নতুন করে সাজাতে পছন্দ করে। এখনের প্রতিটা দিনই যখন সোনালী রোদ মাখা সকালের ঝলমলে সূর্যের  মিষ্টি আলোর তাপ চোখে পড়ে তখনই ভেঙে যায় আমাদের প্রশান্তির ঘুম। মন চরম বিরক্তকর হয়ে ওঠে, কারণ চাইলেও সে আর ঘুমিয়ে থাকতে পারে না। নিজের অজান্তেই ঘুম ভেঙ্গে চোখ খুলতে হয় সূর্যের দিকে। মনে হচ্ছে প্রকৃতিও এখন বিরক্ত এই অসহ্য রসিকতায়, যার কারণেই হয়তো আজ বাদ সেধেছে বেরসিক বৃষ্টিতে।  পাংশুটে আকাশ ও চেষ্টায় আছে সাদা কালো মেঘের  আড়ালে রক্তিম সূর্যকে ঢেকে ফেলতে। আমরাও অপেক্ষায় থাকি অঝোরধারায় হয়তো আজকে ঝরবে বারিধারা। 

এখন আর সেই ঝুমঝুম নুপুরের শব্দে ঘুম ভাঙতে রাজি নয়, আরেকটু বৃষ্টি হোক এর সাথে আরামদায়ক ঘুম আর একটু হোক। আমরা বাঙালিরা হয়তো সবাই অনির্দেশ্য একটি বর্ষাকালের জন্য অপেক্ষা করি। শুধু দুচোখ দিয়ে দেখব দুর আসমানের পুরোটা জুড়ে কালো মেঘের ঘনঘটা। কখনো আবার এক চিলতে রোদের ফাঁকে মুখ কালো করা মেঘের ভিড় অথবা হঠাৎই মুষলধারে বৃষ্টি ঝরবে সবার উঠেনে। অন্য সব ঋতু থেকে এই ঋতুটা হয়তো বেশি একটু পরিবর্তনের কারণ, এই ঋতু যেন কারো কথা মানতে রাজি না। প্রতি বছরের মতো এইবারো বিরহ-আলস্যের বর্ষা বছর ঘুরে ফিরে এসেছে তার নিজস্ব ভঙ্গিতেই। আর সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে আমার প্রিয় কদম ফুলকে। 

 গ্রীষ্মের প্রখরতা কমানোর জন্য  আম, কাঁঠালের ঘ্রাণে মুখর গ্রাম্য জীবনে চারপাশ। ঠিক সেই মুহূর্তে আষাঢ়ে বাদলের দিনে আগমন ঘটেছে  আমার পছন্দের হৃদমহীনি কদম ফুলের। এই অবিরাম বর্ষণের সঙ্গে আসতে শুরু করেছে কদম ফুলের রেণুর সেই মিষ্টি সুবাস। মনে হয় যেন কদম আর বর্ষা একে অপরকে আলিঙ্গন করে রয়েছে বহুকাল ধরে। এ জন্যই হয়তো বলা হয় কদম ফুলকে বর্ষার দূত। আমি মনে করি রূপসী তরুর অন্যতম রূপবতী হলো কদম ফুল। যখন গাছে গাছে সবুজ পাতার ডালে গোলাকার মাংসল পুষ্পাধার দেখা দিতে শুরু করে এবং তার  সাথে বের হওয়া সরু হয় হলুদ পাপড়ির মুখে সাদা অংশ। সেই সময় কদম নিজেকে সাজিয়ে তুলে এক ভিন্নভাবে।

 আমি যখন তাকিয়ে দেখি হলদে-সাদা মি‌শ্রিত ফুল‌টি দেখতে ঠিক যেন ভোরের উষা।  মেঘের সঙ্গে এর এতো মিল দেখেই হয়তো এর আরেক নাম রাখা হয়েছে মেঘাগমপ্রিয়। এবং অনেক নারীরাই নিজেদের সঙ্গে তুলনা করে এর নাম দিতে পছন্দ করে ললনাপ্রিয়। এছাড়াও কদম কে আরো অনেকেই বিভিন্ন নামে ডাকতে পছন্দ করে তার মধ্যে রয়েছে সুরভি, প্রাবৃষ্য।  এত এত ভিন্নতার ছোঁয়াতে কদম নিজেকে আরও গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে প্রকৃতির সাথে। আমি যখন তাকিয়ে থাকি তখন মনে হয় একটি কদম্বগাছ হাজারো বলা না বলা কথার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবং যুগের পর যুগ আবহমান বাংলার মানুষের সঙ্গে গড়ে তুলেছে নিবিড় সখ্য।

 অন্য সকল ফুলের মতই কদম ফুল মিশে আছে বাঙালির মনে। মানুষের ভাব ভাবনায় অন্তরিক্ষে হয়ে উঠেছে সাহিত্যের অন্যতম অনুষঙ্গ কদম ফুল।  মানুষের মুখে মুখে এখনো পল্লীকবি জসীমউদ্‌দীনের সেই গান এখনও সোনা রায়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে সিক্ত কোন বিকেলে কোন প্রিয় মানুষের অপেক্ষার গল্পগুলো এখনো মন কারে এই নবীন সমাজে। সেই গল্পে এখনো নতুন করে গোধূলিরাঙ্গা আলোয় মন মহুয়ায় আনন্দের সুর বাজায় অনুগামী কাদম্বিনী। আমার কাছে সবসময় মনে হয় কদম ছাড়া বর্ষা একেবারেই বেমানান।  প্রাচীরের ধারে ঘেঁষে থাকা সেই পুরনো কদম গাছ গুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় বর্ষা নিজের সবটুকু ভালোবাসা বিলিয়ে দিতে মোটেও কার্পণ্যতা করে না। যখন ফুলের পরাগে বৃষ্টির স্বচ্ছ জল চুইয়ে পড়তে শুরু করে তখন আড়ষ্ট  নেশার উদ্রেক তৈরি হতে থাকে। 

পছন্দের একটি গান যতবারই শুনি ততবারই নিজের মনের মধ্যে আনন্দ তৈরি হয়।

> বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/ আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান’—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


গানের এই চরণ গুলো আমাদের নবীন জীবনে বর্ষার আনন্দকে ভুলে যেতে দেয় না। আমাদের নিজেদেরকে তৈরি করে নতুন করে। শহর কিংবা গামে একগুচ্ছ কদম ফুল ছাড়া বর্ষার বার্তা জানাতেও নিজের মধ্যে কেমন যেন সংকোচ বোধ হয়।

 
![IMG_20220715_115656.jpg](https://images.hive.blog/DQma2pyeQUBdLNMZsM4qi537Ey5fu6kELPvThkWwp8rJfN8/IMG_20220715_115656.jpg)
👍 , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , , ,